উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১/০৪/২০২৩ ৯:২২ এএম

মুফতি রেজাউল হক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছে অগণিত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। এদের অনেকের কাছেই তিনি আসমানি কেতাব পাঠিয়েছেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর তিনি নাজিল করেছেন কোরআনুল কারিম। আল্লাহর এই কেতাব কেয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরিত সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। মানব সভ্যতায় কোরআনের অবদান অনস্বীকার্য।

শিক্ষিত জাতি গঠনে কোরআন

পবিত্র কোরআন অর্থসহ
পবিত্র কোরআন আল্লাহর কালাম; যাতে রয়েছে মানবজাতির জন্য হেদায়েত তথা পথনির্দেশনা। নগদ ইসলামিক অ্যাপে রয়েছে অর্থসহ পবিত্র কোরআন পড়া ও শোনার ব্যবস্থা। একজন নগদ ইসলামিক গ্রাহক অ্যাপে লগইন করে ‘পবিত্র কোরআন’ ফিচারটি ব্যবহার করে নিয়মিত পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।

শিক্ষা ছাড়া উন্নত নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ সুনাগরিক আশা করা যায় না। কোরআন জ্ঞান আহরণ ও শিক্ষা অর্জনের উপর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে। একজন নবী এবং একটি জাতির কাছে আল্লাহর প্রেরিত কোরআনের প্রথম প্রত্যাদেশই ছিল ‘পড় তোমার প্রভুর নামে’। (সুরা আলাক, আয়াত : ১)।

কোরআনের শিক্ষা ধারণ করে নবী মুহাম্মাদুর রাসুল্লাহ (সা.) মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে একটি নিরেট নিরক্ষর জাতিকে সাক্ষরতাসম্পন্ন জাতিতে রূপান্তর করেন। কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি তাঁর অনুসারীদের জ্ঞান চর্চা, বিদ্যা অর্জন ও গবেষণায় এতটাই উৎসাহিত করেছেন যে, তার অনুসারীরা সুদীর্ঘ সহস্রাধিক বছরকাল জ্ঞান-বিজ্ঞানে গোটা বিশ্বে নেতৃত্ব দিয়েছে। পৃথিবীর কোনও ধর্মগ্রন্থ বা মতবাদের বইয়ে এমন সার্বজনীন শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবৃত হয়নি।

শান্তি প্রতিষ্ঠা

দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পৃথিবীতে অর্থবহ শান্তি -শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কোরআনের নির্দেশনা সুস্পষ্ট ও অমোঘ। কোরআনের বিধান মতে, ন্যায়পরায়ণতা-সুবিচার প্রতিষ্ঠা আবশ্যক। সর্বদা সত্য, সুন্দর ও হকের উপর অবিচল থাকা। অন্যায়-অবিচার পরিহার করা বিধিবদ্ধ আইন। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টি হয়, এমন যে কোনও কর্মকাণ্ড কোরআনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

শ্রেণি বৈষম্যের অবসান

কোরআন ‘মানুষের পরস্পরের মধ্যে কোনোধরনের ভেদাভেদ নেই’— মর্মে ঘোষণা দিয়েছে। উঁচু-নিচু, আশরাফ-আতরাফ, অভিজাত-ইতর ইত্যাদি শ্রেণিবৈষম্যের মূলে কঠুরাঘাত করেছ। সবাইকে এক পিতা ও এক মাতার সন্তান বলে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর; যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দুই জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন এবং আল্লাহকে ভয় কর যাহার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা কর এবং সতর্ক থাকো জ্ঞাতি বন্ধন সম্পর্কে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়াল তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৭৬)

কোরআনের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি তাকওয়া। অর্থাৎ কথায়-কাজে, চলনে-বলনে, চিন্তায়-বিশ্বাসে এবং সততা-সত্যবাদিতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে।

আল্লাহ তায়াল বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে; পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

অবক্ষয় দূরীকরণ

ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে ও সামাজিক জীবনে সকল অবক্ষয় দূরীকরণে কার্যকর ফর্মুলা দিয়েছে কোরআন। মাদক, জুয়া ইত্যাদি পাপাচার বলে ঘোষণা করে এই আসমানি কেতাবে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ধারক স্বর ঘৃণ্য বস্তু শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৯০)

মানবিকতার সংরক্ষণ

কোরআন সবাইকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। পিতৃহীন বিধবা অসহায় সম্বলহীন অনাথ অসহায়ের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে অনেক আয়াতে।

অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সম্পর্কের উন্নয়ন

কোরআনুল কারিমের সৃষ্টির উপর স্রষ্টার হক, সন্তানের উপর পিতা-মাতার হক পিতার উপর সন্তানের দায়িত্ব ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে। বহুমাতৃক সম্পর্কের কারণে অর্পিত দায়িত্ব কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করার প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহর নিরঙ্কুশ একত্ববাদের নিখাদ বিশ্বাস তার এবাদত বন্দেগী আরাধনা-বন্দনা, পিতা-মাতার সেবাযত্ন, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান, গুরুজনের প্রতি ভক্তি ইত্যাদির নির্দেশনা রয়েছে কোরআনে। সমাজে বসবাসরত সকলের অধিকার আদায় করে সম্প্রীতি বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছে।

যে কেউ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কোরআন পাঠ করলে বিলক্ষণ জানতে পারবে যে, মানুষের পাশবিকতা অবদমিতকরণে, মানবিকতার উন্মেষ সাধনে এবং নৈতিকতার বিকাশে কোরআন অব্যর্থ প্রেসক্রিপশন; যা পরিপালনের মাধ্যমে জীবনের সকল ক্ষেত্রে অর্থবহ শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সুখ সমৃদ্ধিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

লেখক: মুহতামিম, দারুল উলুম ঢাকা।

পাঠকের মতামত

তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ

ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ, ...